
ঢাকা, ১৫ অক্টোবর: সাগর-রুনির খুনিদের গ্রেফতারে আগামী ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারকে সময় বেধে দিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। নয়তো ২৫ নভেম্বর সারা দেশের সাংবাদিকদের নিয়ে ঢাকায় সাংবাদিক মহাসমাবেশ হবে। এছাড়া সব প্রতিষ্ঠানে সাংবাদিকদের ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার, নিয়মিত বেতন ও চাকরিচ্যুতি বন্ধের দাবিতে ৮ নভেম্বর প্রেস ক্লাবের সামনে সাংবাদিক সমাবেশ হবে।
সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বিএফইউজে’র সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী এই ঘোষণা দেন। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), জাতীয় প্রেস ক্লাব ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
এতে উপস্থিত ছিলেন বিএফইউজ’র আরেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব শওকত মাহমুদ, ডিইউজের সভাপতি আবদুস শহিদ ও ওমর ফারুক, সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ বাকের হোসাইন ও শাবান মাহমুদ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ডিআরইউ সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু।
ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, “সাগর-রুনি হত্যার তদন্ত কাজ অনির্দিষ্টকাল চলতে পারে না। এর একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকতে হবে। যেদিন প্রকৃত খুনিদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা হবে, সেদিন আমরা বুঝব সরকার এই বিচারকাজ ঠিকভাবে করছে।”
“হত্যায় জড়িত সন্দেহে আটজনকে গ্রেফতারের ঘোষণায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। কিন্তু তার কথায় অস্পষ্টতা কাটেনি। এখনো রহস্যের জট খোলেনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পেশাদার খুনিদের নাম বলেছেন। তাহলে নিশ্চয় তাদেরকে কেউ ভাড়া করেছিল। কে তাদের খুনের নির্দেশ দিয়েছিল এবং খুন কেন হলো সেটিও আমরা জানতে চাই” বলেন ইকবাল সোবহান।
রুহুল আমিন গাজী বলেন, “হত্যার রহস্য উন্মোচন না হলে বুঝব- প্রকৃত খুনিরা ধরা পড়েনি। আমাদের বক্তব্যে তদন্তকাজ বাধাগ্রস্ত হবার কথা সরকার কেন বলছে, সেটিও আমরা বুঝি না। ইতিমধ্যে গ্রেফতারকৃতরা আদালতে বলেছেন- তারা সাগর-রুনির নামও কোনোদিন শোনেনি, এই খুনের সঙ্গে তারা জড়িত নয়। আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার, খুনিরা গ্রেফতার হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।”
তিনি বলেন, “বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাংবাদিক নির্যাতন এবং কথায় কথায় সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুতির বিরুদ্ধেও আমরা আন্দোলনে যাচ্ছি।”
গত ১১ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসা থেকে মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনির লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর থেকেই সাংবাদিক সংগঠনগুলো এক হয়ে রাজপথে আন্দোলনে নামেন। কিন্তু আট মাস পেরিয়ে গেলেও আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের মোটিভ এখনো জানাতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
গত ৯ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডে জড়িত আটজনকে সনাক্তের দাবি করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর। তার ভাষায়, সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের একজন সাগর-রুনির পারিবারিক বন্ধু তানভীর। আরেকজন তাদের বাসভবনের পাহারাদার রুদ্র ওরফে পলাশ। বাকি পাঁচজন পেশাদার খুনি। এছাড়া হত্যাকাণ্ডে জড়িত হিসেবে সাগর-রুনির বাড়ির আরেক পাহারাদার হুমায়ুন ওরফে এনামুলকে ধরিয়ে দিতে ১০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণার কথা জানান মন্ত্রী।
কিন্তু গ্রেফতারকৃতরা হত্যায় জড়িত থাকার কারণ সম্পর্কে কিছুই জানাতে চাননি তিনি। পরদিন তার বক্তব্যকে ‘অস্পষ্ট’ ও ‘বিভ্রান্তিমূলক’ বলে মন্তব্য করেন সাংবাদিক নেতারা। এছাড়া তানভীর নামে সাগর-রুনি’র কোনো বন্ধুকে চেনেন না বলে জানান রুনির ভাই নওশের আলম রোমান।
১৫ অক্টোবর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সাংবাদিকদের মহাসমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। মন্ত্রীর বক্তব্যের পর সাংবাদিক নেতারা এই কর্মসূচি স্থগিত করেন এবং এদিন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে জানান তারা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন