“আমি এই পুরো সময়টা এক প্যাণ্ডেল থেকে আরেক প্যাণ্ডেলে ঘুরে বেড়িয়েছি এবং আমার বন্ধুদের সাথে আনন্দে সময় কাটিয়েছি,” বলেছেন গুলশানআরা খাতুন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১-বছর-বয়সী এক মুসলমান শিক্ষার্থী ৷ “আমাদের সবার আনন্দ ও মজা করার জন্য এটা একটা চমৎকার উপলক্ষ”৷
সম্প্রদায়গত পূজাগুলো বিভিন্ন পটভূমির মানুষদেরকে একত্রিত করার জন্য একটি চমৎকার উপায়, বলেছেন হিন্দু পুরোহিত সমরেশ ভট্টাচার্য ৷ “পূজার হাজার হাজার দর্শনার্থীর মধ্যে আপনি বিভিন্ন সম্প্রদায় বা ধর্মের মধ্যে পার্থক্য করতে পারবেন না, আপনি বুঝতেই পারবেন না যে কারা পূজার আচার-অনুষ্ঠান দেখতে আসছে অথবা কেবল মূর্তিগুলোকে এক নজর দেখতে এসেছে,” বলেছেন তিনি ৷
“দূর্গা মন্দ অশূরের [দেব] বিরুদ্ধে ভালোর জয়কে প্রতীকীভাবে ফুটিয়ে তোলে ৷ এছাড়াও এটা পারিবারিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরে কারণ দূর্গা - মা - তার চার ছেলেমেয়েকে নিয়ে তার বাবার বাড়িতে বার্ষিক ভ্রমণে যান৷ এই আচার-অনুষ্ঠানগুলোর সাথে প্রতিটি বাঙালি নিজেকে যুক্ত করতে পারে, এমনকি মন্ত্রগুলো সংস্কৃতে উচ্চারণ করা হলেও,” বলেছেন ভট্টাচার্য৷
এই বার্ষিক উৎসবের সময় পুরুষ, মহিলা ও শিশুরা তাদের সবচেয়ে ভালো জামাকাপড়গুলো পরে প্যাণ্ডেলে ঘুরে বেড়ায় -- সাময়িকভাবে তাঁবু খাটিয়ে প্যাণ্ডেলগুলো তৈরি করা হয় যেখানে দেবী দূর্গা ও তার চার ছেলেমেয়ে, লক্ষী, স্বরস্বতী, গনেশ ও কার্তিকের মূর্তি স্থাপন করা হয় -- তারা সুস্বাদু খাবার খেয়ে থাকে এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়৷
একটি গুরুগম্ভীর অনুষ্ঠান থেকে গণ উৎসবে রূপান্তর
এক দশক আগেও, দূর্গা পূজা ছিল একটি গুরুগম্ভীর অনুষ্ঠান ৷ তখন পূজা আয়োজনকারী সম্প্রদায়গুলো ধনী ও দরিদ্রের ব্যবধান ভেঙে দিয়েছিল, পূজায় মূলত আচার-অনুষ্ঠানের উপর মনোযোগ দেয়া হতো ৷
এখন, এই উৎসবের প্রস্তুতি শুরু হয় কয়েক মাস আগে থেকে ৷ বাঁশ ও তেরপলের তৈরি সাধারণ প্যাণ্ডেল থেকে শুরু করে উদ্ভাবনী মাধ্যম যেমন সিডি, টেরাকোটা ভাষ্কর্য, কাঁচের চুড়ি ও অন্যান্য অনেক সামগ্রী দিয়ে শৈল্পিক ভঙিমায় প্যাণ্ডেল তৈরি করা হয়৷
এই বছর, গ্রাম বাংলার সবুজ প্রকৃতি থেকে শুরু করে রাজস্থানের মরুভূমি এবং কাশ্মীরের পাহাড়ি এলাকা পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের পরিবেশের থিম ব্যবহার করে অনেক প্যাণ্ডেল তৈরি করা হয়েছে৷ সামাজিক, সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক থিমগুলোকে ফুটিয়ে তোলার জন্য সৃজনশীলভাবে আলোকসজ্জা করা হয় ৷ প্রিয় ব্যক্তিত্ব ও ঘটনাবলির ছবি তৈরি করার জন্য লাইট ব্যবহার করা হয়৷
যে সব শিল্পীরা প্যাণ্ডেল তৈরি করেন, তাদের জন্য এই উৎসবই সারা বছরের মধ্যে প্রধান আয়ের উৎস ৷ উত্তর কোলকাতার কুমারটুলি এলাকায় কাদা ও বাঁশ দিয়ে মূর্তি তৈরি করা হয়, এই এলাকাটি পূজার কমপক্ষে ছয় মাস আগে থেকে ব্যস্ত হয়ে ওঠা শুরু হয়৷
বেশিরভাব পূজা আয়োজকদের বাজেট আকাশ ছুঁয়েছে ৷ কর্পোরেট পৃষ্ঠপোষকতা এখন রীতিতে পরিণত হয়েছে ৷ রথিন স্যানাল, কোলকাতার সল্ট লেকের মাঝারি-স্কেলের একজন পূজা আয়োজক বলেন, “গত পাঁচ বছরে আমাদের বাজেট প্রায় তিনগুণ বেড়ে প্রায় ৩০,০০০ ডলারে দাঁড়িয়েছে, এর মধ্যে রয়েছে আমন্ত্রিত শিল্পীরা সহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং চার দিন ধরে দুপুরে গণভোজের আয়োজন”৷
চার-দিনব্যাপী কমিউনিটি পূজার জন্য ২০০,০০০ ডলারের বাজেট একটি সাধারণ বিষয়৷ “ভারতের পূর্বাঞ্চলে কার্যক্রম পরিচালনাকারী সব কোম্পানিগুলো তাদের বিজ্ঞাপন ও স্পন্সরশিপ বাজেটের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ পূজার সময় খরচ করার জন্য রেখে দেয়,” খবরকে বলেছেন জনসংযোগ কর্মী অশোক কুমার মুখোপাধ্যায়৷ তিনি বলেন, টেলিকম, মিডিয়া ও ভোগ্যপণ্যের কোম্পানিগুলো পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে ৷
যেহেতু বছরের এই সময়টাতে বেশিরভাগ বাঙালি জামা-কাপড় থেকে শুরু করে আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র, ভোগ্যপণ্য ও বই কিনে থাকে, তাই পূজা বিক্রেতাদের জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনে এবং সেইসাথে প্রকাশকদের জন্য নিয়ে আসে আশীর্বাদ ৷
গড়িয়াহাটের খুচরা ব্যবসায়ী শরদিন্দু পাল বলেন, “আমার বার্ষিক বিক্রির এক-তৃতীয়াংশই হয়ে থাকে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের মধ্যে, এই উৎসবের মৌসুম শুরু হয় দূর্গ পূজা দিয়ে এবং শেষ হয় দিওয়ালির মাধ্যমে”৷
[ সুত্রঃ খবর দক্ষিণ এশিয়া ]
![]() |
পাঁচ দিন ও পাঁচ রাতের জন্য, অধিবাসী ও দর্শনার্থীরা কোলকাতায় জীবিকার পেছনে ছোটা, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ব্যাপক দারিদ্র্যকে ভুলে যায়৷ বুধবারে (২৪শে অক্টোবর) শেষ হওয়া দূর্গা পূজা উৎসব, সময়ের সাথে সাথে ধর্মীয় ছুটির দিন থেকে একটি সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিণত হয়েছে যার আবেদন হিন্দু সম্প্রদায়ের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে ৷
প্রতি বছর অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে সব ধরনের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় পটভূমির মানুষ এই আনন্দ উৎসবে যোগ দেয় ৷ একটি সৌহার্দ্যময় ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিমূলক পরিবেশে হিন্দু, মুসলমান ও খ্রিস্টানদেরকে একত্রিত করার জন্য এই উৎসবের এক অনন্য ক্ষমতা আছে ৷
সম্প্রদায়গত পূজাগুলো বিভিন্ন পটভূমির মানুষদেরকে একত্রিত করার জন্য একটি চমৎকার উপায়, বলেছেন হিন্দু পুরোহিত সমরেশ ভট্টাচার্য ৷ “পূজার হাজার হাজার দর্শনার্থীর মধ্যে আপনি বিভিন্ন সম্প্রদায় বা ধর্মের মধ্যে পার্থক্য করতে পারবেন না, আপনি বুঝতেই পারবেন না যে কারা পূজার আচার-অনুষ্ঠান দেখতে আসছে অথবা কেবল মূর্তিগুলোকে এক নজর দেখতে এসেছে,” বলেছেন তিনি ৷
“দূর্গা মন্দ অশূরের [দেব] বিরুদ্ধে ভালোর জয়কে প্রতীকীভাবে ফুটিয়ে তোলে ৷ এছাড়াও এটা পারিবারিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরে কারণ দূর্গা - মা - তার চার ছেলেমেয়েকে নিয়ে তার বাবার বাড়িতে বার্ষিক ভ্রমণে যান৷ এই আচার-অনুষ্ঠানগুলোর সাথে প্রতিটি বাঙালি নিজেকে যুক্ত করতে পারে, এমনকি মন্ত্রগুলো সংস্কৃতে উচ্চারণ করা হলেও,” বলেছেন ভট্টাচার্য৷
এই বার্ষিক উৎসবের সময় পুরুষ, মহিলা ও শিশুরা তাদের সবচেয়ে ভালো জামাকাপড়গুলো পরে প্যাণ্ডেলে ঘুরে বেড়ায় -- সাময়িকভাবে তাঁবু খাটিয়ে প্যাণ্ডেলগুলো তৈরি করা হয় যেখানে দেবী দূর্গা ও তার চার ছেলেমেয়ে, লক্ষী, স্বরস্বতী, গনেশ ও কার্তিকের মূর্তি স্থাপন করা হয় -- তারা সুস্বাদু খাবার খেয়ে থাকে এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়৷
একটি গুরুগম্ভীর অনুষ্ঠান থেকে গণ উৎসবে রূপান্তর
এক দশক আগেও, দূর্গা পূজা ছিল একটি গুরুগম্ভীর অনুষ্ঠান ৷ তখন পূজা আয়োজনকারী সম্প্রদায়গুলো ধনী ও দরিদ্রের ব্যবধান ভেঙে দিয়েছিল, পূজায় মূলত আচার-অনুষ্ঠানের উপর মনোযোগ দেয়া হতো ৷
এখন, এই উৎসবের প্রস্তুতি শুরু হয় কয়েক মাস আগে থেকে ৷ বাঁশ ও তেরপলের তৈরি সাধারণ প্যাণ্ডেল থেকে শুরু করে উদ্ভাবনী মাধ্যম যেমন সিডি, টেরাকোটা ভাষ্কর্য, কাঁচের চুড়ি ও অন্যান্য অনেক সামগ্রী দিয়ে শৈল্পিক ভঙিমায় প্যাণ্ডেল তৈরি করা হয়৷
এই বছর, গ্রাম বাংলার সবুজ প্রকৃতি থেকে শুরু করে রাজস্থানের মরুভূমি এবং কাশ্মীরের পাহাড়ি এলাকা পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের পরিবেশের থিম ব্যবহার করে অনেক প্যাণ্ডেল তৈরি করা হয়েছে৷ সামাজিক, সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক থিমগুলোকে ফুটিয়ে তোলার জন্য সৃজনশীলভাবে আলোকসজ্জা করা হয় ৷ প্রিয় ব্যক্তিত্ব ও ঘটনাবলির ছবি তৈরি করার জন্য লাইট ব্যবহার করা হয়৷
যে সব শিল্পীরা প্যাণ্ডেল তৈরি করেন, তাদের জন্য এই উৎসবই সারা বছরের মধ্যে প্রধান আয়ের উৎস ৷ উত্তর কোলকাতার কুমারটুলি এলাকায় কাদা ও বাঁশ দিয়ে মূর্তি তৈরি করা হয়, এই এলাকাটি পূজার কমপক্ষে ছয় মাস আগে থেকে ব্যস্ত হয়ে ওঠা শুরু হয়৷
বেশিরভাব পূজা আয়োজকদের বাজেট আকাশ ছুঁয়েছে ৷ কর্পোরেট পৃষ্ঠপোষকতা এখন রীতিতে পরিণত হয়েছে ৷ রথিন স্যানাল, কোলকাতার সল্ট লেকের মাঝারি-স্কেলের একজন পূজা আয়োজক বলেন, “গত পাঁচ বছরে আমাদের বাজেট প্রায় তিনগুণ বেড়ে প্রায় ৩০,০০০ ডলারে দাঁড়িয়েছে, এর মধ্যে রয়েছে আমন্ত্রিত শিল্পীরা সহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং চার দিন ধরে দুপুরে গণভোজের আয়োজন”৷
চার-দিনব্যাপী কমিউনিটি পূজার জন্য ২০০,০০০ ডলারের বাজেট একটি সাধারণ বিষয়৷ “ভারতের পূর্বাঞ্চলে কার্যক্রম পরিচালনাকারী সব কোম্পানিগুলো তাদের বিজ্ঞাপন ও স্পন্সরশিপ বাজেটের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ পূজার সময় খরচ করার জন্য রেখে দেয়,” খবরকে বলেছেন জনসংযোগ কর্মী অশোক কুমার মুখোপাধ্যায়৷ তিনি বলেন, টেলিকম, মিডিয়া ও ভোগ্যপণ্যের কোম্পানিগুলো পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে ৷
যেহেতু বছরের এই সময়টাতে বেশিরভাগ বাঙালি জামা-কাপড় থেকে শুরু করে আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র, ভোগ্যপণ্য ও বই কিনে থাকে, তাই পূজা বিক্রেতাদের জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনে এবং সেইসাথে প্রকাশকদের জন্য নিয়ে আসে আশীর্বাদ ৷
গড়িয়াহাটের খুচরা ব্যবসায়ী শরদিন্দু পাল বলেন, “আমার বার্ষিক বিক্রির এক-তৃতীয়াংশই হয়ে থাকে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের মধ্যে, এই উৎসবের মৌসুম শুরু হয় দূর্গ পূজা দিয়ে এবং শেষ হয় দিওয়ালির মাধ্যমে”৷
[ সুত্রঃ খবর দক্ষিণ এশিয়া ]
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন