চুয়াডাঙ্গা
জেলার ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাস খুবই গৌরবময়। সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই এখানে অনেক
নামীদামি খেলোয়াড়ের পদচারনা ছিল। তৎকালীন সময়ে ভারতবর্ষে ফুটবলের যাদুকর
খ্যাত আবদুস সামাদ একবার এখানকার একটি আঞ্চলিক ফুটবল টুর্ণামেন্টে অংশ নেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্রীড়াঙ্গন থেকেই উত্থান ঘটেছে দেশবিখ্যাত অনেক
খেলোয়াড়ের। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন অজিত কুমার মন্ডল, রাফায়েল সরকার,
জীবন কৃষ্ণ সাহা, কানাই লাল, বিশ্বনাথ, বলাই বাবু, বিলু আনিস প্রমুখ।
মূলত
চুয়াডাঙ্গায় সর্বপ্রথম ফুটবলের গোড়াপত্তন হয় ১৮৯৬ সালে, দামুড়হুদা উপজেলার
কুড়ালগাছি-কার্পাসডাঙ্গা এলাকায়। ১৯০৭ সালের দিকে কুড়ালগাছি-কার্পাসডাঙ্গা
এলাকায় ফুটবল আরো জমজমাট হয়ে ওঠে এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আগ পর্যন্ত
তা অব্যাহত থাকে। ওই সময়ে কুড়ালগাছি-কার্পাসডাঙ্গা ফুটবলে আঞ্চলিক শীল্ড
টুর্ণামেন্ট শুরু হয়। চুয়াডাঙ্গা ফুটবল দল ওই টুর্ণামেমেন্ট অংশ নিয়ে
চ্যাম্পিয়নশীপ ট্রফি লাভ করে।
মাঠ :
চুয়াডাঙ্গার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য মাঠের মধ্যে
চুয়াডাঙ্গা টাউন মাঠ,
চুয়াডাঙ্গা স্টেডিয়াম মাঠ,
চুয়াডাঙ্গা ভি.জে হাইস্কুল মাঠ ইত্যাদি ।
কৃতি খেলোয়াড় :
চুয়াডাঙ্গার
ক্রীড়াঙ্গন সবসময় প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের পদভারে মুখরিত থেকেছে। বিশেষ করে
ফুটবল খেলার জগতে চুয়াডাঙ্গা সেই পুরানো কাল থেকেই একট বিশেষ গৌরবময় ঐতিহ্য
বহন করে আসছে।
ব্রিটিশ
আসলে পাক-ভারত উপমহাদেশের মধ্যে খেলাধুলায় চুয়াডাঙ্গার নাম বিশেষভাবে
পরিচিত ছিল। ওই সময়ের ফুটবল তারকাদের মধ্যে ছিলেন চুয়াডাঙ্গার কৃতি সন্তান
কানাই লাল, হরিদাস বৈরাগী, অনিলকুমার, মতিয়ার রহমান মল্লিক, আবুল হোসেন
ডুডি জোয়ার্দ্দার, শাহাবউদ্দিন আহম্মদ, আব্দুল ওদুদ মন্ডল, মোতাহার হোসেন,
ফকির জোয়ার্দ্দার শাফায়েত আলী বিশ্বাস প্রমুখ।
আরো
যে সকল কৃতি খেলোয়াড়গণ সুদীর্ঘ কয়েক দশক চুয়াডাঙ্গার ফুটবল অঙ্গনকে
দেশে-বিদেশে সুপরিচিত করে রেখেছিলেন, তাদের মধ্যে আলী হোসেন জোয়ার্দ্দার,
ওহিদ হোসেন জোয়ার্দ্দার, ইয়াকুব আলী(নালূ), মঙ্গল মল্লিক, টেংরা মল্লিক,
কানাইলাল বিশ্বাস (কালু) এস এম হানিফ, ইদ্রিস আলী মল্লিক, চকলা মিয়া, ওদুদ
মিয়া, রফাতুল্লাহ (পন্ডিত), দাশু মাখার্জী, মজিবুল হক জোয়ার্দ্দার, আবদুল
হাই মালিক, শফি মিয়া, আজিবার রহমান মাল্লিক, ইবাদুতুর রহমান (ইবু মিয়া),
টুকু চৌধুরী, একরামুল হক জোয়ার্দ্দার (শান্তি), কবির মিয়া, সাজাহান আলী
বিশ্বাস, জামাত আলী, আখের আলী, লস্কর মিয়া, সুবেদার মাস্টার, হাবিবুর
রহমান, ফকরুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার লুলু, আবুল কালাম জোয়ার্দ্দার, আবদুল
কুদ্দুস, আবদুল মান্নান মুহুরী, আবদুল খালেক মালিতা, আলতাফ হোসেন,
জাহিরউদ্দিন ওয়ারা জেপি, সফিউদ্দিন মুংলা, এনামুল হক হকি, আবদুর রহমান
বিলা, আশরাফ আলী, গোলাম মোর্শেদ জোয়ার্দ্দার প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য।
লন টনিস :
ব্রিটিশ আমলে ১৯১৬ সালে চুয়াডাঙ্গায় টেনিস ক্লাব গঠিত হয়ে খেলা শুরু হয়।
চুয়াডাঙ্গার
উল্লেখযোগ্য টেনিস খেলোয়াড় হলেন : মোহাম্মদ আলী মল্লিক, মতিরাম আগরওয়ালা,
সতিয়া বাবু, ইউসুফ আলী জোয়ার্দ্দার, ইব্রাহিম বিশ্বাস, আকবর আলি, এ্যাডঃ
আয়ুব আলী, ডা. আসহাব-উল-হক জোয়ার্দ্দার, এম.এম ওয়াহেদ হোসেন, ইসমাইল হোসেন
প্রমুখ। পাকিস্তান আমলে ইসমাইল হোসেন তিনবার এককভাবে টেনিস বিভাগীয়
চ্যাম্পিয়ন হয়ে চুয়াডাঙ্গার মুখ উজ্জ্বল করেন।
|



চুয়াডাঙ্গা টেনিস মাঠ |
|
লৌকিক খেলাধুলা
চুয়াডাঙ্গা
জেলার সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের একটি অন্যতম বলিষ্ঠ ধারা হচ্ছে লোকায়ত
খেলাধুলা। জাতীয় গৌরবের প্রশ্নে খেলাধুলার একটি বিশিষ্ট ভূমিকা রয়েছে।
খেলাধুলা চিত্ত বিনোদনের বহুবধি উপায়ের অন্যতম। একটা জাতির উৎসাহ-উদ্দীপনা
শৌর্য ও সাহসিকতার পরিচায়ও খেলাধুলায় নিহিত থাকে।
হাডুডু :
হাডুডু
গ্রামবাংলার বহুল প্রচলিত খেলা। বিশেষ জনপ্রিয়তার কারণে এটি বাংলাদেশের
জাতীয় খেলা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। হাডুডু বীরত্বের খেলা। এ খেলা এককভাবে
বিপক্ষের সম্মিলিত আক্রমণের সম্মুখীন হয়ে তাদের পরাজিত করে বিজয়ী বেশে ফিরে
আসার মধ্যে যথেষ্ট শারীরিক শক্তি, কৌশল, ক্ষিপ্রতা ও শৌর্যবীর্যের
প্রয়োজন।
বুড়িছুট :
বুড়িছুট
একটি জনপ্রিয় খেলা। এই খেলায় প্রাচীনকালের বিবাহ রীতির ছায়াপাত লক্ষ্য করা
যায়। এই খেলায় দুটি দল থাকে। কিশোর-কিশোরীরাই প্রধানত এ খেলায় অংশ নেয়।
এক পক্ষের একজন খেলোয়াড় বুড়ি বা বৌয়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। বিপরীত পক্ষের
খেলোয়াড়দের কাজ হল বুড়ি বা বৌকে পাহারা দেওয়া। বৌপক্ষের একজন খেলোয়াড় একটা
ছড়া বা শব্দ একটানা দম বন্দ করে উচ্চারণ করতে করতে বৌয়ের পাহারাদারদের
ছুঁয়ে মর করার চেষ্টা করে। উদ্দেশ্যে আটকে রাখা বুড়ি বা বৌকে উদ্ধার করা।
এক্কাদোক্কা :
মেয়েদের
সর্বাধিক প্রচলিত একটি যদি হয় চু কিৎ কিৎ, তবে অন্যটি নিঃসন্দেহে
এক্কাদোক্কা। এমন বাঙালি মেয়ে পাওয়া যাবে না যে নাকি এই দুটো খেলার একটিতেও
অংশ নেয়নি।
লাঠিখেলা :
মহররম
উপলক্ষে যুবকরা লাঠি হাতে দলবদ্ধভাবে এই খেলা পরিবেশন করে থাকে। লাঠির
তালে ঢোল, কাঁসর বাজানো হয়। লাঠিয়ালরা আঁটসাঁট রং-বেরঙের যোদ্ধার পোশাক
পরে, হাত ও মাথায় লাল কাপড় বেঁধে, পায়ে নূপুর পরে, হাতে মেকি তরবারি, ছোরা ও
বড় থালা ব্যবহার করে যুদ্ধের ভঙ্গিতে এই খেলা পরিবেশন করে থাকে। মুসলিম
সম্প্রদায় তাদের ধর্মীয় আবেগকে এই খেলার মাধ্যমে প্রকাশ করে থাকে আশুরা
উপলক্ষে।
ঘুড়ি ওড়ানো :
ঘড়ির
জনপ্রিয়তা পৃথিবীব্যাপী। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশও ঘুড়ির
জনপ্রিয়তা লক্ষ্য করা যায়। ঘুড়ি উড়ানো খুবই পুরানো খেলা। গ্রিসে ৪০০
খ্রিস্টাব্দের দিকে ঘুড়ি ওড়ানোর কথা জানা যায়। প্রায় সেই একই সময়ে চীন দেশে
ঘুড়ি ওড়ানোর খবর ইতিহাসে পাওয়া যায়। তবে বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন, এশিয়ার আদি
অধিবাসীরাই প্রথম ঘুড়ি তৈরি করে এবং ওড়ায়। আমাদের দেশে প্রধানত
শিশু-কিশোররাই ঘুড়ি উড়িয়ে থাকে। তবে মধ্য বয়সী লোকজনকেও ঘুড়ি ওড়াতে দেখা
যায়। |
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন